এই ব্লগটি সন্ধান করুন

সোমবার, ৮ জুলাই, ২০১৩

কোথায় গেল চামচারা : গোলাম মাওলা রনি


কোথায় গেল চামচারা : গোলাম মাওলা রনি

July 7, 2013

‘কোথায় আমাদের চাল, গম, মরিচ আর ভূট্টা কন্যা? আমরা খুঁজছি আমাদের সমুদ্রকন্যা, বই বিতরণপুত্র ও রাবিসের বাবাকে! ‘

গাজীপুরে মহাজোটের ভরাডুবির পরে আওয়ামীলীগের স্পষ্টবাদী খ্যাত গোলাম মাওলা রনি এমপি তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন- কোথায় আমাদের দলীয় আমলা ও পুলিশ কর্তারা, যারা আমাদেরকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতো? কোথায় আমাদের তথাকথিত চামচারা, যারা বলতো সবকিছু ঠিক আছে? গাজীপুরে জয় নয়, সম্মানজনক পরাজয়টুকুও কেন পেলাম না?

কোথায় আমাদের চাল, গম, মরিচ আর ভূট্টা কন্যা? আমরা খুঁজছি আমাদের সমুদ্রকন্যা, বই বিতরণপুত্র ও রাবিসের বাবাকে! এরা আমার সর্বশেষ পারমাণবিক অস্ত্র। আর সেই অস্ত্রের সাহায্যে আগামী সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করবো এতে কি কারো সন্দেহ আছে? প্রার্থী আজমত উল্লার কি দোষ ছিলো? কেন গাজীপুরে গেলেন না ব্যবসায়ী নেতারা? যাদেরকে এতগুলো টেলিভিশন, কুইক রেন্টাল, ব্যাংক, বীমা এবং শেয়ার বাজার দেয়া হলো- তারা আজ কোথায়? দেশ প্রেমিকেরই বা কি হলো?

আমীরে হেফাজতে ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (দা.বা.)


আমীরে হেফাজতে ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (দা.বা.)

জাগরণের’ আগুনে পুড়ল যারা


জাগরণের’ আগুনে পুড়ল যারা

শুক্রবার, ০৫ Jul ২০১৩, ০৩:৪৯ অপরাহ্ন
জসিম উদ্দিন

ক্ষমতাসীনদের কাছে হেফাজতে ইসলামের কদর দেখে এখন খটকা লাগছে। এরাই কি সেই হেফাজত, যাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে নগ্নভাবে ব্যবহার করেছে সরকার। অপমান করে যাদের বাস-ট্রেন থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। জোর করে স্টেশন থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দাড়ি, টুপি ও কুর্তা দেখে হেফাজত বলে শনাক্ত করে রাস্তায় যুবলীগ-ছাত্রলীগ বেধড়ক পিটিয়েছে। কাউকে কাউকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ডাম্প করে চূড়ান্তভাবে ক্র্যাকডাউন চালিয়ে স্তব্ধ করে দিয়েছে।
ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষনেতাদের পক্ষ থেকে হেফাজতকে সমালোচনা ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বলা হয়েছে, জামায়াত, বিএনপি ও হেফাজত একই দল। এরা সবাই স্বাধীনতাবিরোধী জঙ্গি মৌলবাদী খুনি চক্র। শাপলা চত্বর থেকে জঘন্যভাবে তাড়িয়ে দেয়ার আগে-পরে এরা এসব মন্তব্য করেন। অন্য নেতাদের আক্রমণের ঝাঁঝ ছিল আরো নিম্নরুচির। ইমরান এইচ সরকার, স্লোগানকন্যা লাকী, বাপ্পাদিত্য বসুদের ‘গণজাগরণ’ মঞ্চের পক্ষ নিয়ে সরকার এসব মন্তব্য করছে। নির্বাচনী মওসুমে সরকারি দল এখন যেন পক্ষ পরিবর্তন করলেন। যাদের জোর সমর্থন দিতে গিয়ে হেফাজতের লাশ ফেললেন তাদের প্রচারণা ক্যাম্পে ডাকছেন না। উল্টো হেফাজতের একটু ছোঁয়া পেতে মুখিয়ে আছেন ক্ষমতাসীন নেতারা। গাজীপুরের হেফাজত নেতাকর্মীদের হাত-পায়ে ধরছেন। ব্যর্থ হয়ে ছুটছেন তাদের আমির আল্লামা শফী আহমদের কাছে।
শেষতক হেফাজতের ডামি ব্যবহার করলেন এরা। কয়েকজন দাড়ি টুপিওয়ালাকে সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে আজমত উল্লাহর পক্ষের প্রচারকারীরা বলছেন, ‘এই দেখুন আমাদের সাথেও হেফাজত আছে।’ ‘গণজাগরণের’ পৃষ্ঠপোষকেরা সেখানেও ধরা খেয়েছেন। হেফাজতের মূল নেতারা এই ডামিদের পরিচয় প্রকাশ করে দিয়েছেন। তারা কে কোন নেতার নিয়ন্ত্রণাধীন মসজিদে ইমাম মোয়াজ্জিন তা জানিয়ে দিয়েছেন।
‘গণজাগরণের’ নেতাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফিগার হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছিল। তাদের জন্য নিয়মিত পুলিশি স্কটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মন্ত্রীদের জন্য সাধারণত যে ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়। এত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করছে না। কিংবা তাদের দার্শনিক গুরু শাহরিয়ার কবীর, নাসির উদ্দিন ইউসুফ ও জাফর ইকবালকে দিয়ে জমজমাট নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে না সরকার। এই গুরুদের কথামতোই ‘গণজাগরণ’ মঞ্চ চলেছে। সেই মতে, মঞ্চে থেকে যা ঘোষণা দেয়া হয়েছে, সারা দেশে তা কার্যকর হয়েছে। মানুষ হত্যা করা হয়েছে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, ব্যাংক লুট করা হয়েছে, কোচিং সেন্টার তছনছ করা হয়েছে।
শাহবাগের কথিত গণজাগরণ সরকারের কী সর্বনাশ করতে যাচ্ছে, সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি জরিপ আগেই সে ইঙ্গিত দিয়েছিল। মিডিয়ার হাওয়া দিয়ে শাহবাগসংশ্লিষ্টরা সরকারকে সেসব বিষয় আমলে নেয়া থেকে বিরত রেখেছে। ‘গণজাগরণ’-এর পৃষ্ঠপোষক সরকারকে এখন সেটি হাড়ে হাড়ে টের পেতে হচ্ছে। বড় দু’টি হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে স্তব্ধ করে দিয়ে শাহবাগের মোড়ে এরা যেসব কাজ করেছে, অনেক সময়ই তা সার্কাসে রূপ নিয়েছিল। ‘রাজাকারের’ বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে গিয়ে তারা দাড়ি-টুপি, পাজামা-পাঞ্জাবি এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম অধ্যুষিত জনপদের মানুষের বিশ্বাস ও সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ করেছে। মানুষের সেন্টিমেন্টকে তা গভীরভাবে আহত করে।
স্লোগানের ভাষা, শরীরের কসরত ঘৃণা প্রকাশ পেয়েছে। কয়েকজন মানুষের ফাঁসির দাবিতে এ ধরনের দৃষ্টিকটু অঙ্গভঙ্গি নিয়ে স্লোগান দিয়ে বিশ্বে কোনো মহৎ আন্দোলন হয়নি। বিচার নয়, কিছু মানুষের ফাঁসি চেয়েছে এরা। ছোট ছোট শিশুকে এ বিকৃত কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। আবার এরাই হেফাজতের বিরুদ্ধে স্বার্থান্বেষী প্রচারণা চালিয়ে বলেছে, হেফাজত মাদরাসার শিশুদের (ছাত্রদের) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে।
বলা হয়েছে, তুমি কে আমি কে? বাঙালি, বাঙালি। বাংলাদেশে আরো যেসব জাতিগোষ্ঠী এবং সংখ্যালঘু রয়েছে, এটা তাদের অনুভূতিতে আঘাত করেছে। জ্বালানো হয়েছে প্রদীপ। মশাল নিয়ে হয়েছে প্রতিবাদ। এগুলো একটি ধর্মীয় আচার। যেসব প্রতীক ও আচারকে আঘাত করা হয়েছে, সেটিও অন্য একটি ধর্মের অনুসারীদের কাছে সম্মানিত। প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে একটি ধর্মের আচারকে সম্মানের সাথে ব্যবহার করা হবে, অন্য একটি ধর্মের প্রতীককে লাঞ্ছিত করা হবে, এটি সম্ভবত পৃথিবীর কোনো আন্দোলনে ঘটেনি।
এ ধরনের একটি প্রেক্ষাপটে হেফাজতে ইসলাম দৃশ্যপটে আসতে বাধ্য হয়। এর ফলে সরকার ও মিডিয়ার মুখোশও উন্মোচিত হয়েছে। জাগরণের নামে কয়েক মাস ধরে নারী-পুরুষ মিলে শাহবাগে অবস্থান করেছে। আপত্তিকর এ অবস্থানকে নিñিদ্র নিরাপত্তা দিয়েছে সরকার। মিডিয়া এটিকে এক মহান আন্দোলন বলে রাতদিন সাফাই গেয়েছে। অন্য দিকে হেফাজত দৃশ্যপটে আসার সাথে সাথে সরকার তাদের বিরুদ্ধে মুগুরনীতি নেয়। সব শেষে শাপলা চত্বরে তাদের ওপর নৃশংস হত্যালীলা চালানো হয়। এখানেই থেমে যায়নি, তাদের বিরুদ্ধে হামলা, মামলা ও নির্যাতনের পথ অব্যাহত রেখেছে সরকার। সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা বাবুনগরী প্রায় এক মাসের মতো রিমান্ডে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন। রাষ্ট্র নাগরিকদের প্রতিক্রিয়াশীল একটি ুদ্র অংশকে অন্যায়ভাবে আনুকূল্য দিয়েছে। অপর দিকে বৃহৎ একটি অংশকে করেছে দমন-পীড়ন। সমগ্র জাতি এর সাক্ষী হয়েছে।
মিডিয়া সরকারের সাথে তাল মিলিয়ে আলেম-ওলামাদের দানবীয় কায়দায় উপস্থাপনের অপচেষ্টা করেছে। সরকার ও গণজাগরণের সমান্তরাল অবস্থানে গিয়ে মিডিয়া হেফাজতের বিরুদ্ধে প্রবল প্রচারণা চালাতে থাকে। এরা বেছে নেয় পুরনো কৌশল ‘তাণ্ডব’ ও ‘নাশকতা’ তত্ত্ব। নারী ইস্যুকে এরা মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে হেফাজতের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে। এর মাধ্যমে প্রচারণা জমানোর ক্ষেত্রে কিছুটা সফলও হয় মিডিয়া। আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোকে সরকারের পক্ষে সমর্থন আদায়ে সফল হওয়া গিয়েছিল। কিন্তু আসল বিষয় জনগণের সমর্থন চলে যায় বিপরীত পক্ষে। সিটি নির্বাচনের ফলাফল তার স্পষ্ট জবাব নিয়ে আসে। সরকার মিডিয়া এবং কথিত গণজাগরণকে মানুষ যে বিশ্বাস করেনি তা খোলাসা হয়ে গেছে এ নির্বাচনে।
এ ধরনের একটি বিতর্কিত আন্দোলন থানায় থানায় ছড়িয়ে দেয়া হয়। আহাদের সাথে এ খবর মিডিয়া ভীষণ বেগে দিয়েছে। কিন্তু এর নামে যে চাঁদাবাজি হয়েছে, সারা দিন সে মঞ্চ থেকে উচ্চ শব্দদূষণ হয়েছে, ঘৃণা সৃষ্টিকারী সাম্প্রদায়িক স্লোগান দিয়ে মানুষের মনে আঘাত করা হয়েছে, সে খবর মিডিয়া বেমালুম এড়িয়ে গেছে। জাতির মধ্যে ক্যানসার সৃষ্টিকারী এ উপাদানকে বুদ্ধিজীবীরা কত শত অভিধায় অভিষিক্ত করেছিলেন। বিতর্কিত এক ব্লগার খুন হওয়ার পর সরকারপ্রধান ছুটে গেছেন তার বাসায়। তাকে কী চমৎকার উপাধি দেয়া হলো! তিনি নাকি দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ। যারা এই ব্লগারের ধর্মবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানালেন, তাদের হত্যা করে সেই হত্যা নিয়েও করা হয়েছে তাচ্ছিল্য। রক্ত মেখে পড়ে থাকার অভিনয় করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন। ‘সোবহান আল্লাহ’ বলতে বলতে পালিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত মন্ত্রী। সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন একজন হেফাজতকর্মীকেও হত্যা করা হয়নি। এর প্রমাণ দিতে পারলে ওই সংসদ সদস্য রাজনীতি ছেড়ে দেবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী এবং মিডিয়ার অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনগণ অসহায় বোধ করেছে। প্রতিবাদী হেফাজত স্তব্ধ হওয়ার পর তাদের এ অসহায়ত্ব আরো বেড়ে যায়। সিটি নির্বাচনে প্রথম এর জবাব দেয়ার সুযোগ পেল জনগণ।
‘গণজাগরণ’ সরকার ও মিডিয়ার প্রচারণা যদি সঠিক হতো অন্তত রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করতেন। তাদের প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহীর গণজাগরণের নেতার সাথে তাল মিলিয়ে প্রচারণা চালিয়েছিলেন হেফাজত ‘নারীবিদ্বেষী’। হেফাজতকে প্রতিরোধ করা না গেলে ‘সর্বনাশ’ হয়ে যাবে। এর ফল হলো বিপরীত। নারীরা পাঁচ গুণ পর্যন্ত বেশি ভোট দিয়েছেন ‘গণজাগরণের’ প্রার্থীর বিপক্ষে। নারী ভোটকেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি ছাড়া সবগুলোতে পরাস্ত হয়েছেন লিটন। ডাঁমমারী উচ্চবিদ্যালয়ের নারীকেন্দ্রে বুলবুলের দুই হাজার ২৯ ভোটের বিপরীতে লিটন পেয়েছেন মাত্র ৪৮৩ ভোট। বালাজান নেসা উচ্চবালিকা বিদ্যালয় নারী ভোটকেন্দ্রে বুলবুলের এক হাজার ২২ ভোটের বিপরীতে লিটন পেয়েছেন মাত্র ৩৭০ ভোট। চণ্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী ভোটকেন্দ্রে লিটনের ৬৬২ ভোটের বিপরীতে বুলবুল পেয়েছেন এক হাজার ৫৫, রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ ভোটকেন্দ্রে লিটনের ৬৭২ ভোটের বিপরীতে বুলবুল পেয়েছেন এক হাজার ৮০ ভোট। এ রকম প্রায় প্রতিটি নারী ভোটকেন্দ্রে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন লিটন। (রাজশাহী থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক সোনার দেশ; ১৮ জুন ২০১৩)।
সিলেট, খুলনায় এবং বরিশালে ‘গণজাগরণের’ লোকদের ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে কোনো প্রার্থী সাহস পাননি। নারী অধিকারের নামে প্রবল প্রপাগান্ডা চালিয়ে মানুষের সমর্থন নেয়ার অপচেষ্টা বুমেরাং হয়েছে। হেফাজত নয়, বরং নারীদের শত্রু বন্ধুবেশী এই প্রচারণাবিদেরা। ভোট দিয়ে এটাই এরা প্রমাণ করেছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণকারীরা কিভাবে ক্ষমতাসীনদের মাথার ওপর উঠতে পারল। এখন তাদের আত্মসমালোচনার সময়।
‘গণজাগরণের’ পক্ষে দেশের বাইরে থেকেও সমর্থন এসেছে। এ সমর্থন প্রশ্নবিদ্ধ হলেও মিডিয়া কোরাস কাউকে সে প্রশ্ন রাখার সুযোগ দেয়নি। সীমান্তে যখন বাংলাদেশীদের হত্যা করা হয়। কিংবা তিতাসের ওপর বাঁধ দিয়ে যখন জীবন-জীবিকা ও পরিবেশের ক্ষতি করা হয়, ওপার থেকে এ বন্ধুরা একবার আমাদের পক্ষে জেগে ওঠেনি। নির্যাতিতদের পক্ষে একটি গানও রচিত হয়নি। কিন্তু শাহবাগ নিয়ে কলকাতার প্রখ্যাত গায়ক সুমন একের পর এক গান রচনা করেছেন। সেখানকার অনেক সামাজিক সংগঠন সংহতি প্রকাশ করেছেন। অনেকে সশরীরে এসে প্রণোদনা দিয়েছেন। আমাদের ওই সব বিপদে এরা যদি একইভাবে পাশে দাঁড়াত তাহলে ‘গণজাগরণ’কে তাদের সমর্থন বাংলাদেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতো। একই কারণে তাদের সমর্থন দান বরং মানুষের মনে সন্দেহ ও সংশয়ের সৃষ্টি করেছে। আপনা-আপনি জনসাধারণের মধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ইমরান এইচ সরকারের এখনো কোনো সমস্যায় না পড়লেও তাদের পৃষ্ঠপোষক সরকারকে নির্বাচনে তার নগদ মূল্য দিতে হচ্ছে।
এই দুঃসময়ে কেনো ক্ষমতাসীনেরা ইমরান এইচ সরকার, বাপ্পাদিত্য বসু, হঠাৎ গজে ওঠা স্টার লাকীর কাছে যাচ্ছে না। নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি বলে সরকার তাদের সনদ দিয়েছে। প্রতিদিন ‘গণজাগরণ’ মঞ্চে তাদের নেতৃত্বে লাখো জনতা ভিড় করে বলে প্রচারণা চালানো হয়। কেনো নির্বাচনী প্রচারণায় রাখা হচ্ছে না শাহরিয়ার কবীর, নাসির উদ্দিন ইউসুফ কিংবা জাফর ইকবালকে। মধ্যযুগীয় ভাবমর্যাদার হেফাজতের পেছনে দৌড়ঝাঁপ না করে একটি হুডখোলা জিপে জাফর ইকবালকে দাঁড় করিয়ে দিলে হ্যামিলনের বংশীবাদকের কাজ হয়ে যাওয়ার কথা। তরুণ যুবক সবাই এক বাঁশিতেই কাতারবন্দী হয়ে যাওয়ার কথা। ক্ষমতাসীনদের মাথায় কি এই মহাপুরুষদের ব্যবহারের চিন্তা ঢুকছে না?
‘শাহবাগ’ শব্দটির প্রতি এখনো কারো ঘৃণা জন্মেনি। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে একদল তরুণ নিজেদের ব্লগার দাবি করে সেখানে জমায়েত হন। তারা বিচারাধীন একটি বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দাবিদাওয়া পেশ করেন। অল্প সময়ের মধ্যে ‘গণজাগরণ’ নাম দিয়ে এর নিয়ন্ত্রণ নেয় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে বাম অ্যাকটিভিস্টরা। তরুণ প্রজন্মের নাম করে সেখান থেকে ঘৃণা ছড়ায় এরা। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডকে মিডিয়া মহৎকর্ম বলে সনদ দেয়। সঙ্কীর্ণচেতা ক্রিয়াকলাপকে নজিরবিহীন কাভারেজ দেয়ার কারণ রহস্যজনকই রয়ে গেছে। কিন্তু ‘শাহবাগ’ সংগঠিত এ গোলোযোগ বাংলাদেশে যে গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে তার আগুনে পুড়ে নিঃশেষ হয়েছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক গোষ্ঠী।
এখন জাতির সামনে স্পষ্ট হয়েছে শাহবাগের আরোপিত ও নিয়ন্ত্রিত উত্থান একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি এবং কিছু মানুষের জীবনহরণ ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি। গণজাগরণের ভারসাম্যহীন বেলুন অনিবার্য কারণে ফুটো হয়ে গেছে। এ বেলুন আর ফোলানো তো দূরের কথা, এটিকে যারাই ফুঁ দেবেন তারাই ক্যানসারে আক্রান্ত হবেন; অন্তত ক্ষমতাসীনদের হেফাজতের দিকে দৌড়ঝাঁপ দেখে তা-ই মনে হচ্ছে।

SAHBAGI KOBITA

SAHBAGI KOBITA

MANNA DER CONDDE
..............................
..............................
শাহবাগীদের সেই বিরানী গাজার আড্ডাটা আর নেই,
আজ আর নেই,
কোথায় হারিয়ে গেল গাজার বিকেল গুলো সেই,
আজ আর নেই।
ইমরান আওয়ামীলীগে,
অমি পিয়াল খোয়াড়ে,
নেই তারা আজ কোন খবরে,
গ্রান্ডের গাজাটিস্ট নাস্তিক থাবা বাবা,
শুয়ে আছে যে আজ কবরে।
কার সাথে নেচে নেচে,
আঘাত পেয়ে যে শেষে,
পাগলা হয়েছে জাফ্রিকবাল।
তানভীর ভুগছে দুরন্ত ক্যান্সারে,
জীবন করেনি তাকে ক্ষমা আর।
টম জেরী চেহারা, কাধেতে ঝোলানো ব্যাগ,
মুছে যাবে শান্ত'র নামটা,
সব গুলো ছবি তার হল যে আলুতে ছাপা,
পেল শুধু উপহাস ধিক্কার।
মেডিকেল কলেজের ছেলে,
ইমরান সরকার,
ছাত্রলীগ যে করত,
চোখ ভরা লালসা, শয়তানী চিন্তা নিয়ে লাকির
দিকে চেয়ে থাকত।
লাকি আজ সব চেয়ে সুখে আছে,
শত শত ভক্ত প্রেমিক তার,
মিডিয়া কাভারেজে আগা গোড়া মোড়া সে,
জমির চাচার কাছে নেইকোন দাম তার।
শাহবাগের রাস্তায়,
নেশাখোর মেয়েরা,
অশ্লীল অভিনয় করত,
চ্যানেলের রিপোর্টার মুন্নী সাহা রোজ রোজ,
মনগড়া খবর যে পড়ত।
সেই শাহবাগ নেই আজ,
মন্চটা তবুও আছে,
শাপলাও আজ খালি নেই,
একই সে ঢাকাতে আজ,
এসেছে হেফাজত,
শুধু সেই সে দিনের বিরিয়ানী নেই।
কত জাগরনের ঢেউ উঠে,
এই চেনা ঢাকাতে,
কত জাগরন ব্যর্থ হয়ে যায়,
কত মুরগী চোর এল গেল,
কত দালাল আসবে,
শুধু ইসলাম থেকে যায়।
শাহবাগের সেই আড্ডাটা আর নেই, আজ আর নেই। কোথায়
হারিয়ে গেল গাজার আসর গুলো সেই, আজ আর নেই।
লা লা লা লাল লা লা

শুক্রবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১২

২০১১ বহুমাত্রিক অপরাধ নিয়ে শোরগোল সারা বছর

পরিসংখ্যানগত ফারাক বেশি না হলেও কয়েকটি আলোচিত অপরাধের কারণে ২০১১ সালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চলেছে বিস্তর শোরগোলএমনকি রাজনৈতিক আন্দোলন ও ইস্যু তৈরির ক্ষেত্র হয়েছিল নানা ধরনের অঘটনবড় ধরনের সহিংসতা না থাকলেও এ বছর বিচ্ছিন্ন অনেক ঘটনাতেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছেঅপরাধমূলক ঘটনার সুবাদে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিব্রত হয়েছে সরকার
চলতি বছরের শেষার্ধে গুপ্তহত্যা বিতর্ক প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেবিভিন্ন স্থান থেকে সাদা পোশাকধারীদের হাতে আটক প্রায় ১০০ জনের খোঁজ মেলেনি বলে পরিবারগুলো থেকে অভিযোগ ওঠেরাজধানী ঢাকাতেই চলতি বছর নিখোঁজ হয়েছেন ৩০ জনএ পর্যন্ত ১৬ জনের লাশ নদী ও জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়েছেএ ছাড়া মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৭৮ জনহত্যার পাশাপাশি পুলিশের কর্মকাণ্ডও অনেক আলোচনার জন্ম দেয়হরতাল চলাকালে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর পুলিশের নির্মম নির্যাতন ও মতিঝিলে জামায়াতের এক কর্মীকে পদপিষ্ট করার ঘটনায় নিন্দার ঝড় বয়ে যায়এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাদেরকে খিলগাঁও থানায় নির্যাতন, র‌্যাবের গুলিতে ঝালকাঠিতে লিমনের পঙ্গুত্ব আলোচনার জন্ম দেয়শবেবরাতের রাতে সাভারের আমিনবাজারে পুলিশের মদদে ছয় ছাত্রকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনাও দীর্ঘদিন আলোচনায় ছিল
সব ছাপিয়ে নরসিংদীর নির্বাচিত জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হোসেনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনা আলোচনার শীর্ষে উঠে আসেমানবাধিকার সংগঠনগুলোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছর ১১ মাসে খুনসহ ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, নারী নির্যাতন, মাদক কেনাবেচাসহ এক লাখ ৩৭ হাজার অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেছে
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত বছর ২৫৮ জন খুনের ঘটনার শিকার হয়েছেএদের মধ্যে ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, শিক্ষার্থী, শিশু ও নারী রয়েছেডাকাতির ঘটনা ৪০টি, দস্যুতা ২৩২টি, ১৮৯১টি চুরি, অপহরণের শিকার ১০৯ জন, নারী-শিশু নির্যাতন ১৪১১ জন, ধর্ষণের শিকার ২০৫ জন, এসিডে আক্রান্ত ছয়জনএ ছাড়া গত বছর ৯টি বড় ধরনের দাঙ্গা-হাঙ্গামার ঘটনায় ১৩০ পুলিশ আক্রান্ত হনসব মিলে গত বছরে রাজধানীর বিভিন্ন থানাতেই ২১ হাজার ৩৬০টি মামলা হয়েছে
চলতি বছর রাজধানীর আলোচিত হত্যা ঘটনার মধ্যে ছিল যশোরের বিএনপি নেতা নাজমুল ইসলামকে অপহরণের পর হত্যা, মিরপুরে অন্ধ কল্যাণ সংস্থার মহাসচিব খলিলুর রহমান, ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে মা ভার্জিনিয়া রোজারিও ও ছেলে ভ্যালেন্টাইন রোজারিওকে হত্যা, পুরান ঢাকায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী আবুল কালাম, মতিঝিলে যুবদল নেতা শহীদ মোল্লাকে, শ্যামপুরে মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ ও তাঁর গাড়ি চালক হারুনুর রশিদ, শাহবাগে গৃহবধূ কামরুন্নাহার সাদিয়া, পল্লবীতে স্কুলছাত্র শাওন হত্যাসহ বেশ কিছু ঘটনা
অপরাধমূলক ঘটনার পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে বেশ কিছু সহিংসতা উত্তাপ ছড়িয়েছে সারা দেশেপ্রধান বিরোধী দল বিএনপির ডাকা মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আগে রাজধানীতে চলতি মাসেই ঘটেছে সহিংসতা ও তাণ্ডবগোয়েন্দাদের পূর্ব আভাস সত্ত্বেও এ সংঘর্ষ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড রুখতে পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হয়েছেএর আগে শিবিরের কর্মীরা একবার আকস্মিক হামলায় নাস্তানাবুদ করেছে পুলিশকেসে সময়ও যানবাহন ভাঙচুর, অগি্নসংযোগ ও বোমাবাজির ঘটনা সাধারণ মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলেনিষিদ্ধ-ঘোষিত রাজনৈতিক সংগঠন হিযবুত তাহরীরের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েক দফাঢাকা ও চট্টগ্রামে এ সংগঠনের শো-ডাউন মোকাবিলা করতে গিয়ে লাঠিপেটা ও টিয়ার শেল ব্যবহার করতে হয়েছে পুলিশকেবছরের শুরুতে বিমানবন্দর নির্মাণের জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জের আড়িয়ল বিলে পুলিশ-জনতার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেআড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের প্রতিবাদে ৩১ জানুয়ারি ঢাকার নবাবগঞ্জ, দোহার, মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ ঢাকা- মাওয়া মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেপুলিশ হত্যা, অগি্নসংযোগসহ নানা ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতিপরে সরকার সহিংসতা সামাল দিতে বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে
হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই, সংঘর্ষসহ নানা অপরাধমূলক ঘটনাকে ছাপিয়ে চলতি বছর আকস্মিক আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয় 'গুপ্তহত্যা'এ নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ ও আতঙ্ককে বাড়িয়ে দেয় রাজনৈতিক প্রলেপপ্রতিটি নিখোঁজ ঘটনাকেই গুপ্তহত্যার সন্দেহের মোড়কে জড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন মহল থেকে দায়ী করা হতে থাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেপুলিশ ও র‌্যাবকে ইঙ্গিত করে রাজনৈতিক মহল থেকে বলা হতে থাকে ক্রসফায়ারের অপবাদ না নিতে বিকল্প হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে গুপ্তহত্যার পদ্ধতিসরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব গুপ্তহত্যায় নিজেদের সংশ্লিষ্টতা ও দায় এড়িয়ে বক্তব্য দিলেও বিতর্ক এখনো অব্যাহত
চলতি বছরে সারা দেশে শতাধিক নিখোঁজ ঘটনার কিনারা করতে না পেরে পুলিশ ও র‌্যাব এ বিতর্ক থেকে নিজেদের বের করে আনতে পারছে নাএকই সঙ্গে গুপ্তহত্যার ঘটনাগুলোতে জড়িতদের শনাক্ত করতেও তারা ব্যর্থ হয়েছেনিখোঁজ পরিবারগুলোর অধিকাংশেরই অভিযোগ, কোথাও কেউ অপহৃত হলে বা কারো খোঁজ পাওয়া না গেলে তারা পুলিশ বা র‌্যাবের কাছে গিয়ে কোনো সহযোগিতা পায় নাতাতেই সন্দেহ বেড়ে যায়
পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার এ প্রসঙ্গে বলেছেন, বিচ্ছিন্নভাবে কোথাও কিছু ঘটে থাকতে পারেঢালাওভাবে অভিযোগ আনা ঠিক নয়
র‌্যাবের গোয়েন্দা উইংসের প্রধান জিয়াউল আহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশেষ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই একটি মহল এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছেচলতি বছর দেশে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ৯৬৪টিনিখোঁজ হয়েছে ১০৪ জনফলে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৬৮-তেএর মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৪৩২ জনসর্বশেষ ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্তই অপহরণ আর নিখোঁজের সংখ্যা ৭৩ জনউদ্ধার হয়েছে ১৮ জনগুপ্তহত্যার রহস্য উদঘাটনে র‌্যাব কাজ করছেতদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের সংশ্লিষ্টতা পেলে তারাও কোনোভাবে ছাড় পাবে না
পারিবারিক ও পুলিশ সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি আগারগাঁও বিএনপি বস্তির নুর মোহাম্মদসহ তাঁর এক আত্মীয়ও নিখোঁজ হয়েছেনএখন পর্যন্ত তাঁরা উদ্ধার হননিচলতি মাসে শুধু মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী ও আশপাশ এলাকা থেকে আটটি লাশ উদ্ধার হয়এদের মধ্যে ছয়জনের কোনো পরিচয় মেলেনিপরিচয় পাওয়া দুজন হচ্ছেন ঢাকার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের যুবদল নেতা ইসমাইল এবং শরীয়তপুরের মঞ্জুর মুন্সীগত ১৩ জুলাই নারায়ণগঞ্জ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে জামাল নামে এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়এ সময় জামালের পরিবারের পক্ষ থেকে র‌্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়এরপর ১৮ জুলাই জামালের লাশ উদ্ধার হয়এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় চারজনকে, যারা সবাই হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ স্বীকার করে
গত ২২ ডিসেম্বর রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে অপহৃত হন রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবীরগতকাল পর্যন্ত তাঁর সন্ধান মেলেনি১৯ ও ২০ ডিসেম্বর দুদিনে মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ এবং নোয়াখালীতে তিন ব্যক্তি গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ মিলেছেএর আগে ১১ ডিসেম্বর রাজধানীর পাশে ধামরাই-কালিয়াকৈর সড়কের কালভার্টের নিচ থেকে মো. লিপন (৪০) নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ১২ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তিন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার হয়এদিন রাজধানীর শেরে বাংলানগর জাহানারা গার্ডেনের ১৩১ নম্বর বাড়ি থেকে অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার হয়১৪ ডিসেম্বর খুলনার খানজাহান এলাকা থেকে উদ্ধার হয় চরমপন্থী নেতা নিয়ামুলের লাশ১৫ ডিসেম্বর রাজশাহীর পুঠিয়ার জায়গীরপাড়া বিল থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক পুরুষ ও মহিলার লাশ, কোম্পানীগঞ্জের বিএনপি নেতা আবদুল ওহাবের (৭০) লাশ, ভাঙ্গায় মানু ফকিরের লাশ এবং আশুলিয়ায় অজ্ঞাতপরিচয় আরো এক যুবকের লাশগত ২৮ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র ও সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও গবেষণা সম্পাদক শামীম হাসান ওরফে সোহেল, ঢাকা মহানগর ৫০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেনকে হাতিরপুল এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ করা হয়পরে ৮ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীতে ভেসে ওঠা দুটি লাশের মধ্যে একটি ইসমাইল হোসেনের বলে শনাক্ত করেছেু তাঁর স্বজনরাসোহেল ও মাসুম এখনো নিখোঁজ রয়েছেন৭ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকার বাসিন্দা ইউনুস মুন্সী, তাঁর ভাই মঞ্জু মুন্সী, তাঁদের মামাতো ভাই শেখেন মাতবর ও তাঁদের এক ব্যবসায়িক পার্টনার কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকা থেকে নিখোঁজ হন৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর শেরে বাংলানগর থানার পশ্চিম আগারগাঁও শাপলা হাউজিং এলাকা থেকে নিখোঁজ হাজি নূর মোহাম্মদের মেয়েজামাই আবদুল মান্নান ও তাঁর বন্ধু ইকবাল হোসেন অপহৃত হন১ ডিসেম্বর রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে জাতীয় পার্টির নেতা মাহমুদুল হক খান অপহৃত হনপরের দিন ২ ডিসেম্বর সকালে ধামরাইয়ের বাথুলিতে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়৬ ডিসেম্বর ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের মালিগ্রামের কাইয়ুমসহ পাঁচজন অপহৃত হয়েছেন২ নভেম্বর রাজধানীর মগবাজার এলাকা থেকে নিখোঁজ হন রিয়াজুল ইসলাম (৩০)২৬ নভেম্বর মৌলভীবাজার পূর্ব সুলতানপুর (কাজীরগাঁও) থেকে নিখোঁজ হন ১৫ বছরের কিশোর বেলাল আহমেদ রোমান২৪ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার চুনাগুড়া গ্রাম থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেনগত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টন লাইনের বাসার নিচ থেকে অপহৃত হন ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সহসভাপতি কে এম শামীম আকতার৩১ জুলাই ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অস্ত্রধারীরা রাজধানীর দয়াগঞ্জ বাজার মোড় থেকে ধরে নিয়ে যায় জুয়েল সরদার, তাঁর চাচাতো ভাই রাজীব সরদার ও মিজানুর রহমান নামে ওয়ার্কশপকর্মীকে৫ আগস্ট জুয়েল ও মিজানের লাশ পাওয়া যায় গাজীপুরের পুবাইল এলাকার ঢাকা বাইপাস সড়কের নাগদা সেতুর ঢালেএকই দিন রাজীব সরদারের লাশ মেলে ঢাকা-মাওয়া সড়কের পাশ থেকে২ অক্টোবর মিরপুর থেকে নিখোঁজ হন আওয়ামী লীগ নেতা ও ঝুট ব্যবসায়ী আবদুল করিম হাওলাদার৬ জুলাই নিখোঁজ হয়েছেন মোরেলগঞ্জ হাটের মো. হাবিবুর রহমান৪ জুলাই রাজধানী সুপার মার্কেটের সামনে থেকে সজল ও ইমরান নামের দুই যুবক নিখোঁজ হনপরে ১২ জুলাই ঢাকা বাইপাস সড়কের পাশ থেকে সজল ও ১৩ জুলাই ঢাকা-মাওয়া সড়কের পাশ থেকে ইমরানের লাশ উদ্ধার করা হয়এ রকম লাশ উদ্ধার ও নিখোঁজের ঘটনা আতঙ্ক ছড়িয়েছে সর্বত্রবছরের অপরাধ আলোচনায় সে কারণেই শীর্ষে পেঁৗছেছিল 'গুপ্তহত্যা' চলবে........................  

শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১১

আসাম ম্যাচাকারঃ ১৯৮৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী অজানা এক ইতিহাসের নাম। মাত্র ৬ ঘন্টায় ৫০০০ বাংলাদেশী হত্যা !!

আসাম ম্যাচাকারঃ ১৯৮৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী অজানা এক ইতিহাসের নাম। মাত্র ৬ ঘন্টায় ৫০০০ বাংলাদেশী হত্যা !!

by Blood Soldier (রক্ত সৈনিক) on Friday, December 9, 2011 at 4:02pm


বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে আসামের ব্রaমপুত্র নদের অববাহিকায় বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষদের এক জনপথ গড়ে উঠে। এ অভিবাসী নতুন না। দেশ বিভাগের আগে এ উপমহাদেশে এটা হয়ে এসেছে বারবার। কখনো বাংলাদেশ থেকে ইন্ডিয়ায়, কখনো ইন্ডিয়া থেকে বাংলাদেশে বা পাকিস্তান থেকে ইন্ডিয়াতে অথবা ইন্ডিয়া থেকে পাকিস্তানে অভিবাসি হয়ে এসেছেন অনেকজন।ভারতের জ্যোতি বসু, সুচিত্রা সেন, সমরেশ মজুমদার, পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোশারফ, বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ মাইগ্রেট করে আসার অন্যতম উদাহরণ। সেই একই ধারাবাহিকতার ব্রমপুত্র নদের অববাহিকায় আবাস গড়ে উঠে কয়েক হাজার বাংলাদেশীর। যারা আসামে অনেকদিন ধরেই বসবাস করে আসছিলেন। 
১৯৭৯ সালের শুরুর দিকে, আসামে নির্বাচন কমিশন ৪৫ হাজার বিদেশী ভোটারকে ভোটের অধিকার দেন । ঘটনার শুরুটা এখানেই। অল আসাম স্টুডেন্ট ফোরাম ঘোষণা করে বিদেশীদের ভোটার হিসাবে এদের অন্তর্ভুক্ত করলে আসামে রক্তের হলী খেলা বয়ে দেয়া হবে। শুরু হয় বাংলাদেশী খেদাও আন্দোলন। সাথে যোগ দেয় আরও কিছু রাজনৈতিক সংগঠন। গঠন হয় All Assam Gana Sangram Parishad (AGSP)।AGSP বাংলাদেশী খেদাও আন্দোলনে ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ এর মত খুন দেড় হাজার এর বেশী মানুষ আহত, জ্বালাও পোড়াও সহ অনেক ঘটনা ঘটে।

কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন গোষনা করেন। এ নির্বাচন আদালত পর্যন্ত গড়ায়। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস নেত্রী ইন্দ্রাগান্ধীর হস্তক্ষেপে নির্বাচনের আয়োজন হয়। সেই দিন থেকেই আসাম অগ্নিগর্ভ ধারণ করে। AGSP নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেয়। কংগ্রেস সহ কিছু দল নির্বাচনের পক্ষেও মিছিল বের হয়। জনতা নির্বাচনের দাবিতে মিছিল করেন। ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কাছে তারা জোড় দাবিতে সোচ্ছার হন। 

সারা আসামে রিউমার ছড়ানো হয় হাজার হাজার বাংলাদেশী বাংলাদেশ থেকে এসে ভোটে অংশ নিচ্ছে। বাংলাদেশীদের শিক্ষা দেয়ার জন্য AGSP শপথ নেয়। গঠন করা হয় আলাদা আরেকটি ফোরাম। এদিকে ভোট গ্রহন চলছিলো। আসামের মরিগণ জেলার একটা অংশের কথা। সেখানে মোহাম্মাদ হোসেন নামের এক স্বতন্ত্র প্রার্থী হেমান্দ্র নারায়ণ নামের এক প্রার্থীকে হারিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। হেমান্দ্র নারায়ণ ২৫ বছর ধরে ঐ এলাকা শাসন করে আসছিলেন। এতে করে আরো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠা AGSP। প্রতিশোধ নেশায় পাগল হয়ে যায়। ১৯৮৩ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারির দিনের বেলায় মাত্র ৬ ঘণ্টায় আসামের Nellie য় হত্যা করা হয় ৫০০০ মানুষকে যার মধ্যে ৩৫০০-ই ছিল শিশু(মুসলিম)।
এ হত্যাকান্ডের এখনো একটিরও বিচার হয়নি।
 (Death count: 1,800 (official) 3,300 (unofficial)
Villages affected: 14
Cases filed: 668
Chargesheets submitted: 310
Compensation for survivors: Rs 2,000 and tin to build a house
Compensation for kin of dead: Rs 5,000)

ইতিহাসের এ নিষ্ঠুর হত্যকান্ড নিয়ে ৬৮৮ টা মামলা ফাইল হয় এর মধ্য ৩৭৮টি মামলা প্রমাণের অভাবে ক্লোজ করা হয় এবং ৩১০টি মামলা ফাইল হয় পরে আসাম এজিপি সরকার ড্রপ করেন। একটা মামলারো বিচার হয়নি এবং একজনেরও শাস্তি পায়নি।

৭৫ বছর বয়স্ক নরুজ্জাম ভুইয়া যিনি জারিরোড পুলিশ ষ্টেশনে একটি মামলা ফাইল করেন। যেটার এফ আই আর নং (FIR no 86/1983, GR number 231/1983) । ঐ ম্যাচাকারে নুরুজ্জাম ভুইয়া নিজে আহত হন এবং ভুইয়া পরিবারের ১২ জনক খুন হোন । এই হত্যা কন্ডের সাথে জড়িত ১৩ জনকে তিনি চিনেন। তার এই মামলাটিও বাতিল করা হয়

আসামের Nellie ম্যচাকারের আরেকজন সারভাইভার নবি হোসেনের সাক্ষাৎকার দেখুন ইউটিউবে।
(http://www.youtube.com/watch?v=lwiodzxebw0)

আসামের Nellie ম্যচাকারের হত্যকান্ডের বিচারের দাবিতে ২০০৪ সালে গোহাটিতে এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেটাও তৎকালিন বিজেপি সরকার ব্যান করে।
দিনের আলোয় মাত্র ৬ ঘণ্টায় হাজার হাজার শিশুর হত্যাকান্ডের বিচারের বাণী আজ নিরবে নিভৃতে কেঁদে উঠে বাববার। ইন্ডিয়া কি কোনদিন এ হত্যাকান্ডের বিচার করবে?? ইন্ডিয়া কি দিয়ে মুছবে এ রক্তের দাগ? স্রষ্টার বিচার যে বড়ই কঠিন? হয়তো এটাই আজ আসামকে পোড়াচ্ছে!! গোটা ইন্ডিয়াকে পোড়াচ্ছে!! ইতিহাসে শিক্ষা যে বড়ই নির্মম।

shame ইন্ডিয়া shame ........